৪ আগস্ট ২০২৪ শেরপুর জেলায় জুলাই- আগষ্ট বিপ্লবের একটি বিজয় সুচনার নাম —শহীদ মাহবুব,শহীদ সৌরভ,শহীদ সবুজ। আমরা কোনদিন তোমাদের ভুলবো না ভুলতে পারিনা। কোটা সংস্কার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে ছাত্র -জনতা দেশব্যাপী চলমান ১ দফার আন্দোলনের মুখে শেরপুর জেলা শহরেও জ্বলে উঠে আন্দোলনের দাবানল সেই মুহূর্তে প্রশাসনের সহিংস গাড়ী চাপা ও আওয়ামী সন্ত্রাসী সশস্ত্র হামলায় নিহত হন শেরপুরের তিন তরুণ—মাহবুব আলম, সারদুল আশীষ সৌরভ ও সবুজ। আজ সেই বয়াল এক বছর, এই তরুণদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য ইতিমধ্যে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, বিচারাধীন শহীদ মাহবুব এর অধিকতর তদন্তের জন্য না- রাজি দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে।
শহীদ মাহবুব শেরপুর সদর উপজেলার তারাগড় কান্দাপাড়া গ্রামের মাহবুব আলম ছিলেন শেরপুর সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। বয়স মাত্র ১৯ বছর। আইটি ল্যাব নামের একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালাতেন বন্ধুদের সঙ্গে। পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষক হিসেবে।
৪ আগস্ট সকালে ‘কলেজে কথা বলে বাড়ী থেকে বের হন মাহবুব। কিন্তু কলেজে আর পৌঁছাননি। খরমপুর মোড়ে ছাত্রদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে তখন প্রশাসনের গাড়ি মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য মিছিলের উপর দ্রুত চালিয়ে যাওয়ার সময় মাহবুব আলম গাড়ী চাপয় তখন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠা গণতন্ত্রের জন্য তার এই মৃত্যু, তার মৃত্যু ছিল পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড।
শহীদ সৌরভ ছিলেন এক তরুণ সমাজসেবক শহীদ সারদুল আশীষ সৌরভ (২২) ছিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার পাইকুড়া গ্রামের সন্তান। সেকান্দার আলী কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। সমাজসেবায় ছিল সব সময় নিবেদিত প্রাণ, গরিবের জন্য কাজ করে যেতেন, ঈদে খাদ্য বিতরণ করতেন, গণ কবরস্থানের জন্য সংস্কারমূলক কাজ করতেন। সেই একই মিছিলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি উঠিয়ে দিলে রাজপথেই শহীদ হন সৌরভ। তার বাবা মোঃ সোহরাব হোসেন বলেন, ছেলেটা সারাক্ষণ মানুষের উপকার করত। আজও যারা তাকে মেরে ফেলল, তারা বহাল তবিয়তে আছে। এটাই কি বিচার? আমি আমার সন্তানের সঠিক বিচার দেখতে চাই এবং দ্রুত গতিতে।
শহীদ সবুজ একজন দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন, তাকে ঘিরে তার বাবা-মার স্বপ্ন ছিল অনেক — শ্রীবরদী উপজেলার রুপারপাড়া গ্রামের সবুজ তার প্যারালাইজড বাবা ও মা-বোনদের মুখে খাবার তুলে দিতে কাজ করতেন স্থানীয় ফার্মেসিতে। সেই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছিলেন পড়াশোনা। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন মানবিক বিভাগ থেকে। ৪ আগস্ট মিছিলে আওয়ামী দুর্বৃত্তদের গুলিতে প্রাণ হারান সবুজ। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, জিপিএ ৪.৩৩ পেয়েছেন সবুজ। মা সমেজা খাতুন আক্ষেপ সকালে বলল, ‘ভাত রান্না করো, ফিরে এসে খাব।’ কিন্তু আর ফিরে আসেনি।খাওয়াও হয়নি আমার বাবাটির।
মাহবুব ও সৌরভের মৃত্যুর জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী তখনকার প্রশাসন পুলিশবাহিনী ও আওয়ামী দুষ্কৃতকারীরা আর আওয়ামী সশস্ত্র ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান সবুজ।
তাদের পরিবারের অভিযোগ দ্রুত গতিতে আসামিদেরকে ইফতার করা হোক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক দ্রুত গতিতে একই দিনে শহীদ হওয়া পরিবারের সদস্যবৃন্দরা আশা তারা এই বিচার ন্যায় বিচারক হোক। রাষ্ট্রীয় সহিংসতায় তাদের স্বপ্ন থেমে গেল একদিনেই। এদিকে মাহবুবের স্মরণে গড়ে উঠেছে ‘শহীদ মাহবুব আলম মেমোরিয়াল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ ও ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’। ইতিমধ্যেই জুলাই বিপ্লব স্মৃতি স্তম্ভের কাজ শেষের পথে শহীদ পরিবারদের সাথে নিয়ে উদ্বোধন করা। ৪ জুলাই শহীদ বীরদের প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ তরফদার মাহমুদুর রহমান, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিতিতে ও পুলিশের চৌকস টিম গার্ড অফ অর্নার প্রদান করেন।
কয়েক সপ্তাহের তীব্র আন্দোলন, শাটডাউন,মরন কামড়ের মধ্য দিয়ে শতশত শহীদের রক্তের বিনিময়ে টানা ছাত্র-জনতার জীবন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দলটির প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
৪ আগস্ট শহীদ মাহবুব, সৌরভ ও সবুজ শুধু শেরপুরেই নয় চির অম্লান হয়ে থাকবে বাংলাদেশের মাঝে গোটা পৃথিবীর কাছে। তাদের এই আত্মহতি আগামী দিনের ছাত্র-জনতার অধিকার প্রতিষ্ঠা ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, ন্যায় বিচার, বৈষম্যহীন একটা বাংলাদেশ এটাই আমাদের কাম্য। তিন বীর শহীদই ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক সাহসী সৈনিক।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন