শেরপুরে বিদ্যালয়ের জমি বিক্রি কেলেঙ্কারি: শিক্ষক নেতা মহসিন আলী আকন্দের বিরুদ্ধে তোলপাড়

মোঃ সাইদুর রহমান সাদী
0

শেরপুর প্রতিনিধি ঃ

শেরপুর জেলা শহরের দক্ষিণ নওহাটায় অবস্থিত উত্তরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালে এলাকাবাসীর জমি, অর্থ ও নানা সহযোগিতায়। বিদ্যালয়টি ৫০ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠে। কিন্তু সেই জমিরই একটি অংশ অবৈধভাবে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বর্তমান প্রধান শিক্ষক মহসিন আলী আকন্দের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশ থেকে ৬.৫০ শতাংশ জমি (বি.আর.এস খতিয়ান নং-৩১৭, দাগ নং-৭৮৯) শিক্ষক, কমিটি বা এলাকাবাসী কাউকে না জানিয়ে ৪৫ লাখ টাকার বিনিময়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। দলিল নম্বর ১৫৫৩৫, তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০২২। অথচ জমিটির ওপর ইতোমধ্যেই নির্মিত ছিল ৪টি ক্লাসরুম, ২টি বাথরুম ও ২টি সেফটি ট্যাংক। রাতারাতি এগুলো ভাঙার চেষ্টা করলে এলাকাবাসী তা দেখে ভিডিও ধারণ করে রাখেন।

এলাকাবাসী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন— বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের জমি তার নিজস্ব এবং তা দিয়ে পূর্ব পাশের জমির সাথে "এওয়াজ বদল" করেছেন। কিন্তু যাচাই করে দেখা যায়, তিনি যে জমিকে নিজের দাবি করেছেন (বি.আর.এস খতিয়ান নং-১৩৩, দাগ নং-৭৯০) তার প্রকৃত মালিক বাংলাদেশ সরকার, ডেপুটি কমিশনার, শেরপুরের পক্ষে।

প্রমাণ হাতে পেয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানালে প্রধান শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের নানা হুমকি দেন। এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগকে সঠিক বলে স্বীকার করেন। তবে রহস্যজনকভাবে কিছুদিন পর থেকে তারা নীরব হয়ে যান। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে রক্ষায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগও উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, মহসিন আলী আকন্দ একসময় আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠনের নেতা ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তিনি বারবার অভিযোগ থেকেও রক্ষা পাচ্ছেন। এমনকি সামাজিক মাধ্যমে শীর্ষ নেতাদের সাথে তার বিভিন্ন ছবিও প্রকাশিত হয়, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।

সবশেষে, অদৃশ্য কারণে বিভিন্ন নেতাদের আশীর্বাদ পেয়ে তিনি আবারও শেরপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে তার আহবায়ক কমিটি থেকে ১৬ জন নেতা পদত্যাগ করেছিলেন। তারপরও কোনো তোয়াক্কা না করে তিনি শিক্ষক নেতা হিসেবে বেপরোয়া কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ— একজন শিক্ষক হয়েও মহসিন আলী আকন্দ এখন কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে মুখ খুললে নানা ভয়-ভীতি দেখানো হয়।

শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও এলাকাবাসীর দাবি— এই কেলেঙ্কারির সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং সংশ্লিষ্ট সবার বিচার নিশ্চিত করা হোক।

এ ব্যাপারে তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)