জামালপুরে বৈরি আবহাওয়ার কারণে ধান শুকানো বাধাগ্রস্ত

দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন
0


ছাইদুর রহমান \ 

বৈরি আবহাওয়ার কারণে জামালপুর সদরসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ধান শুকানোর কাজটি চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যখন তখন বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে গ্রামের কৃষাণ কৃষাণিরা তাদের খেতের পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তারা ধান শুকাতে পারছেন না। এতে নষ্ট হওয়ার পথে পাকা ধান।

চলতি মৌসুমে জামালপুরে ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যে ৮০-৯০শতাংশ জমির পাকা ধান কাটা শেষ হয়েছে। গত ২০মে পর্যন্ত রোদ ছিল। সে সময় যারা পাকা ধান কেটে বাড়ীতে এনেছেন এবং মাড়াই শেষে শুকানোর কাজটি ভালোভাবে করতে পেরেছেন তারা বেঁচে গেছেন। কিন্তু ২০মে পর থেকেই আকাশে কালো মেঘের আনাগুনা বেড়ে যায়। কখনো হালকা, কখনো ভারি বৃষ্টি ঝরতে থাকে। ঘন ঘন বজ্রপাত ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে গ্রামের কৃষকরা বাড়ীতে বা চাতালে ধান শুকাতে পারছেন না। এদিকে গভীর সমুদ্রে নিম্নচাপের কারণে গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির মধ্যে বা বৃষ্টির কিছুটা আগে যারা খেত থেকে পাকা ধান কেটে বাড়ীতে এনেছেন তারা এখন চরম বিপাকে।

জামালপুর সদরের রানাগাছা ইউনিয়নের পলাশতলা গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা জানান, কি আর কমু। টানা বৃষ্টির আগের দিন আমি ৩ বিঘা জমির পাকা ধান কেটে বাড়ীতে এনেছি। কোনো রকমে মাড়াই শেষ করে বাড়ীর মহিলারা সেই ধান সিদ্ধ করেছে। কিন্তু রোদের অভাবে সেই ধান শুকাতে পারছি না। ইতিমধ্যে মাড়াইকৃত ভেজাধান থেকে এক প্রকার দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। আমাদের গ্রামের অনেক কৃষক খেত থেকে পাকা ধান কেটে বাড়ী এনেছে। কিন্তু মাড়াই করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে অনেক কৃষকের কেটে আনা ধানে অঙ্কুর গজাচ্ছে। নিম্নচাপ শেষে কবে রোদ উঠবে, কবে আমরা ধান শুকাতে পারবো এনিয়ে আমরা দু:শ্চিন্তায় আছি।

শরিফপুর ইউনিয়নের বাদেচান্দি গ্রামের কৃষক মমিন মিয়া জানান, রোদের অভাবে প্রায় ৩০ মণ ধান শুকাতে পারছি না। ধানগুলো মাড়াই শেষে সিদ্ধ করেছি। মোটা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছি। আমার এই ৩০মণ ধান আজ নষ্ট হওয়ার পথে।

শরিফপুর ইউনিয়নের একাধিক কৃষক বলছেন, টানা বৃষ্টিতে মাটি ভেজা ও নরম হওয়ায় ধান শুকাতে দিলেই বৃষ্টিতে তা  আরও  ভিজে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে বারবার তুলে রাখতে হচ্ছে। পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হচ্ছে। গ্রামের পর গ্রাম ক্ষেতের সব ধান এখন পুরোপুরি পেকে গেছে। কাটতে না পারায় ঝড়-বাতাসে শীষ থেকে ঝরে যাচ্ছে ফসল। আবার কেটে বাড়ি আনলেও মাড়াই, পরিষ্কার ও শুকাতে না পারায় ধান থেকে চারা গজিয়ে যাচ্ছে। 

মোশারফ হোসেন, মুরাদ আলী, রফিকুল ইসলাম, মোজাফ্ফর হোসেন, ছানোয়ার হোসেন, সেকেন্দার আলী, আনিছুর রহমানসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক কৃষক একই ধরনের কথা বলেছেন। তাদের ভাষ্য, এবার অন্যবারের তুলনায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। উৎপাদন খরচ বাদে লাভের আশা করছেন তারা। বাজারে আশানুরূপ দাম পেলে ঋণ পরিশোধ করে পরিবার নিয়ে সামনের কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে পারবেন।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ আশা পূরণ নিয়ে সংশয়ে আছেন জানিয়ে কৃষক বলছেন, যে অবস্থা তাতে নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তোলা নিয়ে উদ্বেগে আছেন। বাজারে এখন ধানের দাম কমে গেছে। প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে সাড়ে ৯শ’ টাকায়। এর চেয়ে খরচ বেশি হয়েছে। জামালপুর সদরের কোনো এলাকায় জনপ্রতি দিনমজুর কামলার ময়না ১২শ থেকে ১৪ টাকায় উঠেছে। অনেকেই দেড়মণ ধানের দাম দিয়ে একজন কামলা রেখে পাকা ধান কেটেছেন। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। অনেক কৃষকদকে ফের ঋণের জালে আটকে পড়তে পারেন। সরকারিভাবে প্রতি মণ ধানের মূল্য ১ হাজার ৪৪০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে হাট-বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। এতে উৎপাদন ব্যয়, সেচ, সার, বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ ব্যয় মেটাতে পারছেন না অনেক কৃষক। জামালপুর সদর উপজেলার নান্দিনা এলাকার কৃষক আক্কাছ আলী, আব্দুল হামিদ, সুলতান জানান "এবার ধানের আবাদ ভালো হয়েছে, কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে মাথায় হাত। যা দাম পাই, তাতে তো খরচই উঠে না।"

এ বিষয়ে জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা বলেন, "আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার কাঙ্খিত ফলন হয়েছে। আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের নানা সহায়তা দিয়ে আসছি। তবে ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা জরুরি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)