মোঃ সাইদুর রহমান সাদী \
বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় প্রতিদিন নানা ধরনের দলিল, নথিপত্র ও সরকারি কাগজপত্রে ব্যবহৃত হয় বহু টার্ম বা পরিভাষা, যেগুলোর অর্থ না জানা থাকলে সাধারণ মানুষের পক্ষে এগুলো বোঝা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। জমি কেনাবেচা, খতিয়ান যাচাই, নামজারী কিংবা জরিপ সংক্রান্ত কার্যক্রমে ব্যবহৃত এসব শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা জানা থাকলে প্রতারণার ফাঁদ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। নিচে তুলে ধরা হলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমি সংক্রান্ত শব্দ ও তাদের অর্থ (গুগল থেকে সংগৃহীত): মৌজা মানে গ্রাম। জে.এল নং বোঝায় মৌজা বা গ্রামের নম্বর। ফর্দ হলো দলিলের পাতা। খং অর্থ খতিয়ান। সাবেক মানে পূর্ববর্তী বা আগের, আর হাল হলো বর্তমান। বং অর্থ বাহক, যিনি নিরক্ষর ব্যক্তির নাম লেখেন, আর নিং মানে নিরক্ষর। গং অর্থ আরো অংশীদার, সাং অর্থ সাকিন বা গ্রাম। তঞ্চকতা মানে প্রতারণা। সনাক্তকারী সেই ব্যক্তি যিনি বিক্রেতাকে চিনেন। এজমালী অর্থ যৌথ মালিকানা। মুসাবিদা মানে দলিল লেখক। পর্চা হলো বুঝারতের সময় প্রাথমিক খতিয়ানের নকল। বাস্তু অর্থ বসত ভিটা, আর বাটোয়ারা মানে বন্টন। বায়া বোঝায় বিক্রেতা, মং মানে মবলগ বা মোট। মবলক অর্থ মোট। এওয়াজ মানে সমপরিমাণ কোনো কিছু বদলে সমপরিমাণ কিছু দল করা। হিস্যা মানে অংশ। একুনে অর্থ যোগফল। জরিপ মানে পরিমাণ। আবার জরিপ কর নির্ধারণের জন্য করা হয়। চৌহদ্দি অর্থ সীমানা, সিট মানে নকশার অংশ বা মৌজার অংশের নকশা। দাখিলা হলো খাজনার রশিদ। নক্সা মানে ম্যাপ। নল জমি পরিমাপের দণ্ড, আর নাল চাষের উপযোগী ভূমি। পিং মানে পিতা, জং মানে স্বামী। দাগ নং বোঝায় জমির নম্বর। এতদ্বার্থে অর্থ এতকিছুর পর। স্বজ্ঞানে মানে নিজের বুঝে। সমূদয় অর্থ সব কিছু। ইয়াদিকৃত মানে পরম করুণাময়ের নামে শুরু। পত্র মিদং মানে পত্রের মাধ্যমে। বিং মানে বিস্তারিত, দং মানে দখলকার। পত্তন হলো সাময়িক বন্দোবস্ত। বদল সূত্র অর্থ এক জমির বদলে অন্য জমি নেওয়া। মৌকুফ মানে মাপ। দিশারী রেখা মানে দিক নির্দেশনা। হেবা বিল এওয়াজ বোঝায় জমির পরিবর্তে কিছু দান। বাটা দাগ হলো কাটা দাগ যা ভগ্নাংশে থাকে। অধুনা মানে বর্তমান। রোক মানে নগদ। ভায়া হলো বিক্রেতার পূর্বের দলিল। দান সূত্রে দলিল করলে মালিক হয়। দাখিল খারিজ হলো নাম জারি করা। তফসিল মানে সম্পত্তির তালিকা। খারিজ বোঝায় আলাদা খাজনা দেওয়ার অনুমতি। খতিয়ান হলো ভূমির রেকর্ড যেখানে দাগ, মালিক, জমির প্রকার ইত্যাদি থাকে। এওয়াজ সূত্র বা বদল সূত্র মানে সমপরিমাণ বদল। অছিয়তনামা হলো উইল। তফসিল আবার বিক্রিত জমির তালিকা। নামজারী হলো নিজের নামে খতিয়ানে তোলা। অধীনস্থ স্বত্ত্ব মানে জমিদার স্বত্বের অধীনে সৃষ্টি স্বত্ব। আলামত হলো ম্যাপের চিহ্ন। আমলনামা মানে দখল নেওয়ার দলিল। আসলি অর্থ মূল ভূমি। আধি বোঝায় অর্ধেক ভাগে জমি চাষ। ইজারা হলো নির্দিষ্ট সময়ের ঠিকা। ইয়াদদন্ত মানে স্মারকলিপি। ইন্তেহার মানে ঘোষণাপত্র। এস্টেট হলো সরকার বাহাদুরের বন্দোবস্ত দেওয়া জমিদারী। ওয়াকফ মানে ধর্মীয় কাজে উৎসর্গকৃত সম্পত্তি। কিত্তা মানে চারিদিকে আইনী সীমানা যুক্ত ভূমি। কিস্তোয়ার জরিপ মানে জমিকে কিত্তা করে জরিপ। কিস্তি মানে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা। কায়েম স্বত্ত্ব মানে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। কবুলিয়ত হলো স্বীকারোক্তি দলিল। কটকোবালা হলো সুদের বদলে জমি বন্ধক দলিল। কান্দা মানে উচ্চ ভূমি। কিসমত মানে মৌজার অংশ। কোলা ভূমি হলো বসতবাড়ীর সংলগ্ন নাল জমি। কোল মানে নদীর ছোট অংশ। খানাপুরী মানে প্রাথমিক লিপি পূরণ। খামার মানে খাস দখলীয় ভূমি। খাইখন্দক হলো ডোবা, গর্ত। খিরাজ মানে খাজনা। খানে খোদা অর্থ মসজিদ। খসড়া মানে জমির মোটামুটি বর্ণনা। গর বন্দোবস্তি মানে যেটির বন্দোবস্ত হয়নি। গরলায়েক পতিত হলো অনাবাদি ভূমি। গির্বি মানে বন্ধক। চক হলো ম্যাপের এক অংশ। জমা বন্দী মানে খাজনার তালিকা। চাকরাণ মানে জমিদার বাড়ীর কাজে দেওয়া জমি। চাঁদা মানে জরিপের স্টেশন। চটান মানে বাড়ীর সন্নিকট উচ্চ পতিত জমি। চালা মানে আবাদি ভূমি। চর মানে পলি গঠিত ভূমি। জবর-দখল মানে জোরে দখল। জমা হলো জমির খাজনা। জোত মানে প্রজাস্বত্ব। জজিরা মানে নদীর দ্বীপ। জায়সুদী হলো হস্তান্তরবিহীন বন্ধক। জালি হলো এক প্রকার ধান। টেক মানে নদী ভরাট ভূমি। টাভার্স হলো ঘের জরিপ। ঠিকা রায়ত মানে সাময়িক দখলকার। ঢোল সহরত মানে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা। তামিল মানে রেকর্ড সংশোধন। তামাদি মানে সময়োত্তীর্ণ খাজনা। তুদাবন্দী মানে সীমানা নির্দেশ। তহশিল হলো নির্দিষ্ট এলাকা। তলবানা মানে পিয়নের ফি। তলববাকী মানে বকেয়া খাজনার কিস্তি। তালুক মানে নিম্নস্বত্ত্ব। তরমিম মানে শুদ্ধকরণ। তরতিব মানে শৃঙ্খলা। তৌজি মানে কালেক্টরেট রেজিস্ট্রেশন। দিয়ারা মানে চর। দর পত্তনী মানে পত্তনীর অধীন। দখলী স্বত্ত্ব বিশিষ্ট প্রজা মানে দখলদার প্রজা। দশসালা বন্দোবস্ত মানে দশ বছরের বন্দোবস্ত। দিয়ারা আবার পলি চর। দাগ নম্বর হলো প্লট নম্বর। দরবস্ত মানে সমগ্র। নথি মানে রেকর্ড। দেবোত্তর হলো দেবতার উদ্দেশ্যে নিষ্কর ভূমি। দেবিচর হলো জোয়ারের নিচে যাওয়া বালুচর। দিঘলি মানে নির্দিষ্ট খাজনা প্রজা। নক্সা ভাওড়ন মানে পুরনো সীমা নির্ধারণ। নামজারী মানে খতিয়ানে নাম রেজিস্ট্রি। নাম খারিজ মানে জমার ভাগ করে আলাদা নাম তোলা। এসব শব্দ ও তাদের অর্থ বুঝলে বাংলাদেশের ভূমি আইন ও ব্যবস্থাপনায় অনেক জটিলতা সহজে অনুধাবন করা সম্ভব। এটি শুধু সাধারণ নাগরিক নয়, আইনজীবী, ভূমি অফিসার এবং সংবাদকর্মীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ একটি রেফারেন্স হতে পারে।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন