ছাইদুর রহমান \
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নায়েবে আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই। পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিন। তিনি বলেন আমি চাই একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সাবেক সিইসি বলেছেন বর্তমান পদ্ধতিতে যদি এক হাজার বার নির্বাচন হয় তবুও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সংস্কার ব্যতিত নির্বাচন হলে সেই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না। আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। বর্তমান সরকারকে উদ্দ্যেশ করে তিনি বলেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করতে পারবেন কিনা তাহলে সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে আমরা বুঝে নেব জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠ হবে। ১৮ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৪টায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জামালপুর সদর উপজেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত নান্দিনা মহারাণী হেমন্ত কুমারী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণ দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু না হয় তাহলে বুঝবো জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। পরীক্ষা করার জন্য আমরা আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই। আসলে ধোকা কোন জায়গায় থেকে শুরু হয় জানেন, গোড়া থেকে। যারা নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে তারা নৌকায় ভোট দিতে পারে না। যারা লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করে তারা লাঙ্গলে ভোট দিতে পারে না। যারা ধানের শীষের নির্বাচন করে তারা ধানের শীষে ভোট দিতে পারে না। ধানের শীষ কাদের প্রতীক। গরিবদের প্রতীক। কিন্তু ধানের শীষে যারা নির্বাচন করে তাদের একটাও গরিব না। গরিবদের ধোকা দিয়ে নির্বাচন করে ক্ষমতায় যায় তারা।
নায়েবে আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম আরো বলেছেন ২০২৪ এ আন্দোলনে আমরা কি চেয়েছিলাম। দেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না। এই বৈষম্য দূর করার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে। বহু মানুষের জীবন দিতে হয়েছে। বহু মানুষ আহত হয়েছেন। ২৪-এর আন্দোলন হয়েছে জুলুম নির্যাতন দূর করার জন্য। অত্যাচার অবিচার রোধ করার জন্য। কিন্তু ৫ই আগস্টের পর আজকে বাংলাদেশের অবস্থা কি। আমরা কি দেখতে পাচ্ছি। আজকে চাঁদার জন্য মানুষকে তুলে এনে নির্যাতন করা হচ্ছে। পিটিয়ে মারা হচ্ছে। আজকে স্বামীকে বেধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। চাঁদাবাজদের কারণে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। আজকে মানুষকে পাথর দিয়ে মারা হচ্ছে। চাঁদার জন্য রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে। রাস্তায় মাইলের পর মাইল জ্যাম লাগছে। আন্দোলনের সময় আমার মা বোনেরা সামনের কাতারে থেকে আন্দোলন করেছে। আমি নিজেও আন্দোলনের প্রথম কাতারে ছিলাম শুধু বৈষম্য দূর করার জন্য। কিন্তু বৈষম্য দূর হচ্ছে না।
তিনি বলেন দেশে নেতার পরিবর্তন হয়েছে। দলের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু আদর্শের কোনো পরিবর্তন হয় নাই। নেতারা চুরি করার পর, ডাকাতি করার পর, অন্যায় করার পর ফুলের মালা পায়। গলায় ফুলের মালা পেলে নেতারা চুরি ছাড়বে কেন। ডাকাতি ছাড়বে কেন।
আপনাদের একটি ম্যাসেস দিতে চাই। আপনারা জনগণ ঐক্যবদ্ধ হোন। যে দলের মধ্যে চোর আছে, ডাকাত আছে, খুনি আছে, ধর্ষণ আছে আমরা তাদের দল করবো না। ইসলামী আন্দোলনের মধ্যেও যদি এসব দোষ থাকে তাহলে বর্জন করুন। এসব যদি আমার মধ্যেও থাকে তাহলে আমাকেও আপনারা দোষী হিসেবে চিহ্নিত করুন। আমাকেও্ প্রত্যাহার করুন। আমাকেও বর্জন করুন। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আমাকে বিবেক দিয়েছেন, সেই বিবেক দিয়ে চিন্তা করুন। চোর যেখানেই যাবে সেখানেই গিয়ে চুরি করবে। চোর যদি ৫ দিনের জন্য ক্ষমতায় থাকে সে চুরি করবেই। আর ভালো মানুষ যদি একশ বছর ক্ষমতায় থাকে সে একশ বছরেও চুরি করবে না।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতীক হাত পাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাত পাখা নিয়ে নির্বাচন করে তারা সবাই হাত পাখা চালাতে পারে। এখানে পুরুষ, মহিলা, ধনী, গরিব সবাই হাত পাখা চালাতে পারে। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খিষ্ট্রান সবাই হাত পাখা চালাতে পারে। সব্ইা ব্যবহার করতে পারে। তিনি বলেন নৌকা বুকে নিয়ে কেউ ঘুমায় না। ধানের শীষ বুকে নিয়ে ঘুমায় না। তবে হাত পাখা বুকে নিয়ে ঘুমায়। ইসলামী আন্দোলন কি চায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি চায়। শান্তি চায়। তিনি ইসলামী আন্দোলনের নিচে সবাই একতাবদ্ধ হয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
নান্দিনার গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন জামালপুর সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মো: হামিদুর রহমান। সঞ্চালনায় ছিলেন ইসলামী আন্দোলন জামালপুর সদর উপজেলা শাখার সেক্রেটারি হাফেজ কারী মো: রফিকুল ইসলাম। গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক হযরত মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি মুফতী মোস্তফা কামাল, সেক্রেটারি মাওলানা সুলতান মাহমুদ সিরাজী, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্বা পরিষদের সভাপতি মুফতী শফিকুল ইসলাম, ইসলামীক শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি ময়নাল হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জামালপুর জেলা শাখার প্রধান উপদেষ্টা ডা: সৈয়দ ইউনুস আহমদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জামালপুর সদর উপজেলা শাখার আমীর হাফেজ মাওলানা মো: শরিফুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন জামালপুর সদর উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, হৃদয় দ্বীনি সংগঠনের নেতা আলহাজ্ব মো: শামছুল হক, ইসলামী যুব আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি মুফতী হুমায়ুন কবীর, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি নাহিদ খান প্রমুখ।
এর আগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জামালপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত সভাপতি, সেক্রেটারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সেক্রেটারিগণ, ২৪ এর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহত কয়েকজন বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা মটরসাইকেল শোডাউনের মাধ্যমে হাত পাখা প্রতীক নিয়ে গণসমাবেশে যোগদান করেন এবং গণসমাবেশ সফল করেন।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন