শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দায় অবস্থিত জেলার অন্যতম বৃহত্তম বধ্যভূমিটি আজ অযত্ন-অবহেলায় প্রায় বিস্মৃতির অন্তরালে। বছরজুড়ে এ ঐতিহাসিক স্থাপনার প্রতি উদাসীনতা থাকলেও বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এলেই আবারও ফিরে আসে শহীদদের স্মৃতি; তবুও ঝুঁটি বাঁশঝাড়ে ঢাকা স্মৃতিস্তম্ভের দুরবস্থা যেন আর চোখে পড়ে না কারও।
মালিঝিকান্দা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে বাঁশঝাড়ের নিচে লুকিয়ে রয়েছে শহীদদের গণকবর। কোনো সাইনবোর্ড বা পরিচিতি না থাকায় স্থানীয়দের সহায়তা ছাড়া এই গুরুত্বপূর্ণ বধ্যভূমির অস্তিত্ব টের পাওয়াই কঠিন।
সরেজমিনে দেখা যায়—স্মৃতিস্তম্ভটি শেওলায় ঢাকা, ভরে গেছে পরগাছায়। চারদিকে সীমানাপ্রাচীর না থাকায় বেদি হয়ে উঠেছে খড়ি শুকানোর জায়গা। পড়ে আছে গোবর ও খড়। অজ্ঞাতনামা শহীদদের স্মরণে নির্মিত এই স্থাপনায় নেই কোনো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ।
স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী কয়ারি রোড এলাকায় তাদের সবচেয়ে বড় ক্যাম্প স্থাপন করে। এখানকার টর্চারসেলে নির্যাতন শেষে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে পাশের গভীর গর্তে ফেলে দেওয়া হতো। স্বাধীনতার পর গ্রামবাসীরা ফিরে এসে দেখতে পান গর্তটি লাশে ভরা। পরে তারা নিজেরাই সবাইকে মাটিচাপা দেন।
২০০৮ সালে সেনাবাহিনী জমির একটি অংশ অধিগ্রহণ করে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করলেও আজও নেই সঠিক তদারকি।
স্থানীয় শিক্ষক মো. আলমগীর হোসাইন বলেন, “এখানে শত শত মানুষের লাশ পোঁতা। অথচ সরকারিভাবে এর রক্ষণাবেক্ষণ নেই—এটা দুঃখজনক।”
সাবেক ইউপি সদস্য মো. আকবর আলী জানান, “সীমানাপ্রাচীর নেই, দেখভালের জন্য কোনো কমিটিও নেই।”
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সুরুজ্জামান আকন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এ জায়গায় অবাধে গরু-ছাগল ঘোরাফেরা করে, গোবর শুকানো হয়। এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, “দ্রুত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বধ্যভূমিটি সীমানাপ্রাচীরসহ সারা বছর পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের জন্য এখানে তথ্যসমৃদ্ধ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”
দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বহনকারী এ গুরুত্বপূর্ণ বধ্যভূমি সংরক্ষণের দাবিতে স্থানীয়রা দ্রুত উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছেন।

সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন