শেরপুর জেলায় প্রাথমিক শিক্ষকদের চলমান ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার তথ্যমতে, ৭৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭২০টিতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তবে শুধুমাত্র শ্রীবরদী উপজেলায় ২০টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
এ অবস্থায় শ্রীবরদীর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে পরীক্ষা বন্ধ রাখার চেষ্টা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনীষা আহমেদ তালা ভেঙে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নূরন নবীসহ স্থানীয় প্রশাসনের অন্যান্য সদস্যরা।
শিক্ষকদের দাবি আদায় আন্দোলন অব্যাহত থাকলেও জেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকরা বাচ্চাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন। পরীক্ষার তিন দিনের মধ্যে দুটি পরীক্ষা যথারীতি অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম দুই দিনের পরীক্ষায় উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি দেখা গেছে।
একজন প্রধান শিক্ষক জানান, “সকাল ও বিকেল মিলিয়ে সব শ্রেণির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের যেন ক্ষতি না হয়, সেজন্য আমরা দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাচ্ছি।
আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষকরা জানান, তাদের দাবিগুলো দ্রুত পূরণ না হলে আসন্ন রবিবার থেকে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে।
তারা বলেন, “সরকার আমাদের দাবি মেনে নিলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ক্লাসে ফিরে যাব। আমরাও চাই শিক্ষার্থীদের যেন ক্ষতি না হয়।”
তাদের মূল দাবির মধ্যে রয়েছে—সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা, শূন্যপদে নিয়োগ ও পদোন্নতি কার্যকর করা, টাইমস্কেল–সিলেকশন গ্রেডের বকেয়া পরিশোধ এবং আগের মতো অগ্রিম বেতন সুবিধা পুনর্বহাল।
পড়াশোনা ও পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনরত শিক্ষকদের দ্রুত ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে। অভিভাবকরা আরও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
একজন অভিভাবক বলেন, “শিক্ষকরা পরীক্ষার সময় আন্দোলন করুক—আপত্তি নেই, কিন্তু বাচ্চাদের পরীক্ষা জিম্মি করে দাবি আদায় কোন ধরনের আন্দোলন তা বুঝতে পারছি না।”
আরেকজন অভিভাবক জানান, “শিশুদের মানসিক চাপে ফেলে এভাবে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।”
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সায়েদুর রহমান বলেন, “জেলার ৭৪০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭২০টিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুধুমাত্র শ্রীবরদী উপজেলায় ২০টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়নি। আগামী রবিবার সব বিদ্যালয়েই পরীক্ষা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, “সরকারি শিক্ষকদের শাটডাউন দেওয়ার আইনগত অধিকার নেই। সকল শিক্ষককে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্বে ফিরে আসতে হবে।”
ইউএনও মনীষা আহমেদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ থাকায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। মন্ত্রণালয় পরীক্ষায় বাধা দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছে।”

সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন