মন্তব্য কলাম : ধান শুকানোর নামে রাস্তায় মৃত্যু ফাঁদ

দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন
0

\ মোঃ রাশেদুর রহমান রাসেল \

বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনে ধান চাষ একটি চিরাচরিত চিত্র। ফসল কাটার পর ধান শুকানো একটি অবিচ্ছেদ্য ধাপ, যা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়জুড়ে কৃষকেরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সম্পন্ন করে থাকেন। তবে এই চিরচেনা চাষাবাদের কাজ আজ এক ভয়াবহ বাস্তবতার জন্ম দিচ্ছে—সড়কে ধান শুকানো ও এর জন্য ব্যারিকেড বসানো এখন রীতিমতো প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়িয়েছে। জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়ক আজ যেন অঘোষিত ধান মাড়াই কেন্দ্র। পথচারী ও যানবাহনের চালকরা প্রতিনিয়তই পড়ছেন বিপদের মুখে। রাস্তার উপর ধান ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবহৃত হচ্ছে বাঁশ, ইট, কাঠ বা অন্যান্য উপকরণ, যাতে গাড়ি ধানের উপর দিয়ে না চলে যায়। এসব ব্যারিকেড অধিকাংশ সময়েই এমনভাবে বসানো হয়, যার সঙ্গে কোনো সতর্কতা চিহ্ন থাকে না, বিশেষ করে রাতের বেলায় এগুলো হয়ে ওঠে মরার ফাঁদ। গত কিছু বছর ধরে এভাবে সড়কে ধান শুকানোকে কেন্দ্র করে দুর্ঘটনার হার বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। অনেকে আহত হচ্ছেন, আবার কেউ কেউ হারাচ্ছেন জীবন। অথচ এই সমস্যার সমাধান খুব জটিল নয়, যদি তা নিয়ে আন্তরিকতা ও কার্যকর পরিকল্পনা থাকে। এই অব্যবস্থার পেছনে কৃষকেরা একমাত্র দায়ী নন। ধান শুকানোর জন্য গ্রামীণ এলাকায় উপযুক্ত ও নিরাপদ খোলা জায়গার অভাব দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান। স্থানীয় পর্যায়ে খোলা উঠান, খেলার মাঠ কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরেও অনেক সময় ধান শুকাতে বাধা দেওয়া হয়। ফলে রাস্তাই হয়ে ওঠে কৃষকের শেষ ভরসা। একদিকে জীবিকা, অন্যদিকে জীবন—এই দুইয়ের টানাপোড়েনে তারা অযাচিতভাবে রাস্তা দখল করে নিচ্ছেন, যার পরিণতি ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। এ বাস্তবতায় দরকার দায়িত্বশীলতা ও সমন্বয়। প্রশাসনকে সচেতন হতে হবে, স্থানীয় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে, এবং কৃষকের জন্য নিরাপদ ও নির্ধারিত শুকানোর স্থান বরাদ্দ দিতে হবে। একই সঙ্গে জরুরি হয়ে পড়েছে জনসচেতনতা। রাস্তাঘাট শুধু যাতায়াতের জন্য, সেটি মনে রাখা যেমন দরকার, তেমনি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করতে হবে যেন কৃষক বাধ্য না হন সেই রাস্তা দখলে। আজ যদি আমরা এই সমস্যার গভীরে না যাই, আগামীকাল হয়তো আরও বড় কোনো ট্র্যাজেডি আমাদের সামনে দাঁড়াবে। সময় এসেছে ধান শুকানোর মতো একটি প্রথাগত চাষাবাদ পদ্ধতির নিরাপদ আধুনিকায়নের—যাতে কৃষক বাঁচে, আর সড়কও থাকে সবার জন্য নিরাপদ।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন, জামালপুর।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)