![]() |
\ মোঃ রাশেদুর রহমান রাসেল \ |
ঢাকার রাস্তা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি শহরের অলিগলিতে রিকশা এখনো সাধারণ মানুষের যাতায়াতের অন্যতম ভরসা। সাশ্রয়ী, সহজলভ্য এবং দূরত্ব-ভেদে অনুকূল—এই যানটি যেমন জীবিকার উৎস, তেমনি একটি চলমান সংস্কৃতিও বটে। কিন্তু আজ রিকশার প্রসঙ্গ এলেই প্রথমেই উচ্চারিত হয় শব্দটি—“উচ্ছেদ”। নগর পরিকল্পনা, যানজট বা সৌন্দর্য—যাই বলি না কেন, রিকশাচালকদের প্রায়ই দেখা যায় প্রান্তিক করে ফেলা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ উচ্ছেদ কি সত্যিই কোনো সমাধান? রিকশাচালকরা কোনো অপরাধী নন। তারা নিজের ঘাম দিয়ে রুটি রোজগার করেন। তাদের পেশা, তাদের পরিশ্রম, সবই সম্মানের দাবি রাখে। তবে সমস্যা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতির অভাব, এবং পেশাগত দক্ষতার প্রশিক্ষণের অনুপস্থিতি। অনেক চালকই জানেন না কোন রাস্তায় যাওয়া নিরাপদ নয়, কোথায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে। নেই কোনো ট্রাফিক জ্ঞান, নেই যাত্রী ব্যবস্থাপনার ন্যূনতম ধারণাও। এই ঘাটতির দায় রিকশাচালকদের একার নয়—এটা সমাজ ও প্রশাসনেরও ব্যর্থতা। আমরা যদি চেয়েই থাকি যে শহর হবে শৃঙ্খলাপূর্ণ, যানজটমুক্ত, নিরাপদ—তাহলে যেভাবে প্রাইভেটকার চালক বা বাসচালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেভাবে রিকশাচালকদেরও পেশাগত প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। একটি মৌলিক বিষয় হলো—নগরব্যবস্থাপনায় রিকশা বাদ দেওয়া নয়, বরং অন্তর্ভুক্ত করাই হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। শুধু মাত্র নিষিদ্ধ করে দিলে সেই মানুষগুলো কোথায় যাবে? পরিবার নিয়ে কী করবে? শহরের উন্নয়নের নামে আমরা যদি হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষকে উচ্ছেদ করে দিই, তবে উন্নয়নের মানবিক ভিত্তিটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
“দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন” মনে করে, এখন সময় এসেছে রিকশাচালকদের আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার, লাইসেন্সভিত্তিক চালকের তালিকা তৈরির এবং শহরের কোন কোন সড়কে তারা চলাচল করতে পারবেন তা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করার। এই উদ্যোগ চালু হলে যাত্রীও উপকৃত হবেন, প্রশাসনও নিয়ন্ত্রণে সুবিধা পাবেন, আর রিকশাচালকেরাও পেশাগত মর্যাদা ফিরে পাবেন। রিকশা শুধুই একধরনের বাহন নয়, এটি হাজারো দরিদ্র পরিবারের জীবনরসায়ন। সেটিকে মুছে না ফেলে, গড়ে তোলাই হবে সভ্যতার লক্ষণ।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন, জামালপুর।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন