মন্তব্য কলাম - অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল ও ভুয়া সাংবাদিক: সময় এসেছে কঠোর ব্যবস্থার

দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন
0

\ মোঃ রাশেদুর রহমান রাসেল \

বাংলাদেশে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা একসময় ছিল জনগণের ভরসার জায়গা। সত্যের সন্ধানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নেমে পড়তেন সাংবাদিকরা। কিন্তু আজ এই মহৎ পেশাটি যেন দিনদিন তিরস্কারের পাত্রে পরিণত হচ্ছে। মানুষ বলছে— “সাংবাদিক নয়, সাংঘাতিক!” এর মূলে রয়েছে অনিবন্ধিত, অবৈধ অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও তথাকথিত ‘ভুয়া সাংবাদিক’দের দৌরাত্ম্য। 

বিগত এক দশকে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। কিন্তু এই প্রসারের পেছনে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, সেটি অনেক সময়েই আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। বিশেষ করে, যেসব নিউজ পোর্টালের কোনো সরকারি নিবন্ধন নেই, কোনো সম্পাদনা নীতিমালা নেই, কিংবা যেগুলোর মালিকানার বৈধ কাগজপত্র নেই—তারা কেবল নিজেদের স্বার্থে অথবা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় তথ্য বিকৃতি ও গুজব ছড়ানোর কাজ করছে।

এর চেয়েও ভয়াবহ বিষয় হলো, এসব অনিবন্ধিত পোর্টালের ছত্রছায়ায় গজিয়ে উঠছে এক শ্রেণির ভুয়া সাংবাদিক। তাদের নেই কোনো সাংবাদিকতার ন্যূনতম প্রশিক্ষণ, নেই কোনো নৈতিকতা বা দায়িত্ববোধ। অথচ গলায় আইডি কার্ড ঝুলিয়ে, ‘প্রেস’ লেখা স্টিকার লাগিয়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় দাপিয়ে বেড়ায়। কখনো চাঁদাবাজি, কখনো ব্ল্যাকমেইল, কখনো আবার ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা সাংবাদিকতার নাম ডুবিয়ে দিচ্ছে। ফলে প্রকৃত সাংবাদিকদেরও হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি কিছু বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন:

প্রথমত, সরকারের উচিত অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর জন্য একটি কঠোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু রাখা এবং তা দ্রুত সম্পন্ন করা। যেসব পোর্টাল নিবন্ধনবিহীন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কোনোভাবেই অনিবন্ধিত বা অবৈধ পোর্টাল চলতে দেওয়া যাবে না।

দ্বিতীয়ত, সাংবাদিকদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় রেজিস্ট্রেশন নম্বর চালু করা যেতে পারে। প্রত্যেক বৈধ সাংবাদিক একটি নির্দিষ্ট রেজি নম্বর পাবেন, যেটি জাতীয় পরিচয়পত্রের মতোই একটি যাচাইকরণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। এই নম্বর ব্যবহার করে গুগল বা সরকারের একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে সার্চ দিলে সেই সাংবাদিকের নাম, পত্রিকার নাম, কর্মস্থল, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি তথ্য পাওয়া যাবে। এতে ভুয়া সাংবাদিকদের ধরা সহজ হবে।

তৃতীয়ত, সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশের পূর্বশর্ত হিসেবে অন্তত একটি স্বীকৃত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। সাংবাদিকতা কোনো খেয়ালখুশির বিষয় নয়—এটি একটি দায়িত্বপূর্ণ ও জনসেবামূলক পেশা।

চতুর্থত, সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোও নিজেদের ঘরদোর গোছানোর কাজ শুরু করতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় সদস্যপদ দেওয়া কিংবা পরিচয়পত্র প্রদান বন্ধ করতে হবে। প্রকৃত সাংবাদিক ও ভুয়া সাংবাদিকের পার্থক্য স্পষ্ট করতে হবে।

পঞ্চমত, তথ্য মন্ত্রণালয়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সাইবার ইউনিট সমন্বয় করে অনলাইনে ভুয়া সংবাদ প্রচার ও চাঁদাবাজ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে পারে।

আজ যখন মানুষ সত্য সংবাদ পেতে সংশয়ে থাকে, তখন একজন দায়িত্বশীল ও সাহসী সাংবাদিকই পারে সমাজকে সঠিক পথে রাখতে। কিন্তু সেই সত্য সাংবাদিকরা যেন ভুয়া পরিচয়ের ছায়ায় হারিয়ে না যান—সেজন্যই এখনই সময় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার।

সাংবাদিকতা হোক সত্যের, নৈতিকতার ও দায়িত্ববোধের প্রতিচ্ছবি। আর এই মহান পেশাটি হোক সম্মানজনক, নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন, জামালপুর।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)