জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, কৃষিতে নারীর ভূমিকা, নারীর ক্ষমতায়নের প্রধান চ্যালেঞ্জ ও আমাদের করণীয়: প্রেক্ষিত জামালপুর জেলা

দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন
1

 

মুর্শেদ ইকবাল রীমু
পরিচালক, কর্মসূচি, উন্নয়ন সংঘ

ভূমিকা

জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম বড় সংকট, যার প্রভাব পরিবেশ, অর্থনীতি মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গভীরভাবে পড়ছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলো, যেখানে কৃষিনির্ভর জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি, সেখানে এর প্রভাব আরও ভয়াবহ। বাংলাদেশও এই সংকটের বাইরে নয়। বাংলাদেশের নদী বিধৌত অঞ্চলগুলোর মধ্যে জামালপুর জেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপ্রধান এলাকা। এখানকার কৃষি ব্যবস্থা মূলত ব্রহ্মপুত্র, যমুনা এবং অন্যান্য নদীর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলের আবহাওয়া পরিবর্তনশীল হয়ে উঠেছে, যা কৃষি উৎপাদন, জনজীবন স্থানীয় অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।

জামালপুর জেলার অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো বন্যা নদীভাঙন, যা প্রায় প্রতি বছর কৃষি জমি, ঘরবাড়ি অবকাঠামো ধ্বংস করে দেয়। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত দীর্ঘস্থায়ী খরার কারণে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে, পাশাপাশি নতুন রোগবালাই কীটপতঙ্গের আক্রমণের হার বেড়ে গেছে। এর ফলে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং তাদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।

এই অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল নারী কৃষকের অবদান যদিও নারীরা কৃষিকাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু তারা সম্পদের মালিকানা, প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং অর্থনৈতিক স্বীকৃতি থেকে অনেকাংশেই বঞ্চিত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীরা আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন, কারণ তারা সরাসরি কৃষিকাজ এবং পরিবার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তবে নারীর ক্ষমতায়নের পথে রয়েছে নানা বাধা, যেমন সামাজিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কৃষিক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকার স্বীকৃতি না পাওয়া, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রযুক্তির অভাব, এবং অর্থনৈতিক অসমতা তাদের পিছিয়ে রাখছে।

আজকে এই আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, কৃষিতে নারীর অবদান, এবং নারীর ক্ষমতায়নের প্রধান চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বিশদ বর্ননা করার পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর করণীয় পদক্ষেপ নিয়েও মতামত দেয়া হয়েছে, যা স্থানীয় কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করতে পারে ।

n জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমুখী প্রভাব

জামালপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি নদী বিধৌত এলাকা, যা ব্রহ্মপুত্র যমুনা নদীর তীরবর্তী অবস্থানের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে গভীরভাবে যুক্ত। গত কয়েক দশকে এই অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে, যার ফলে কৃষি, জনজীবন, পরিবেশ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

 

. তাপমাত্রার পরিবর্তন খরা বৃদ্ধি

জামালপুরে গড় তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা শীতকালীন এবং গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার পার্থক্যকে আরও প্রকট করছে। খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষিজমি শুকিয়ে যাচ্ছে, জলাশয়ের পানি কমে যাচ্ছে এবং ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

 

 

. বন্যার প্রকোপ নদীভাঙন

জামালপুর জেলা ব্রহ্মপুত্র, যমুনা এবং অন্যান্য নদীর তীরবর্তী এলাকা হওয়ায় এখানে প্রায় প্রতিবছর বন্যার প্রকোপ দেখা যায়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে পানি আসার ফলে নদীভাঙন দেখা দেয়, যা কৃষি জমি হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অতিবৃষ্টির ফলে নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পায় এবং প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ কৃষিজমি জনবসতি। নদীভাঙনের ফলে প্রচুর পরিমাণ কৃষিজমি হারিয়ে যায়, যার ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং জমির উর্বরতা কমে যায়।

 

. অনিয়মিত বৃষ্টিপাত জলবায়ুজনিত দুর্যোগ

এলাকাটিতে বর্ষার সময় কখনো স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হয়, আবার কখনো দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টির দেখা মেলে না। অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষিজীবী মানুষদের চাষাবাদ করতে সমস্যা হয় এবং কৃষি উৎপাদনের হার অস্থির হয়ে পড়ে। আগে নির্ধারিত মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত পাওয়া গেলেও এখন আবহাওয়া অনেক বেশি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কখনো দীর্ঘ সময় ধরে খরা থাকে, আবার কখনো অতিবৃষ্টি হয়ে ফসল নষ্ট করে দেয়। খরার সময় কৃষিজল পাওয়া কঠিন হয়ে যায়, ফলে ফসল উৎপাদন কমে যায়।

 

. কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব

জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ফসল উৎপাদনের চক্র পরিবর্তিত হয়েছে। আগে নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী বোরো, আউশ আমন ধান চাষ করা হলেও এখন এই চক্রে পরিবর্তন এসেছে। তাছাড়া, দীর্ঘস্থায়ী খরা, অতিবৃষ্টি রোগবালাইয়ের কারণে ফসলহানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

. জনস্বাস্থ্য জীববৈচিত্র্যের উপর প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শুধুমাত্র কৃষি নয়, মানুষের স্বাস্থ্যও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে হিটস্ট্রোক পানিশূন্যতা বেড়ে গেছে। বন্যার সময় পানিবাহিত রোগ যেমনডায়রিয়া, টাইফয়েড এবং চর্মরোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া, প্রাণীকুল উদ্ভিদজগতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, কিছু স্থানীয় প্রজাতি বিপন্ন হওয়ার পথে রয়েছে।

 

. ফসলের রোগ পোকা বৃদ্ধি

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে নতুন নতুন রোগ এবং পোকামাকড়ের বিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কৃষকের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কীটনাশক ব্যবহারের পরও অনেক সময় এসব সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

 

. জমির উর্বরতা হ্রাস

অনিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া এবং পানি দূষণের কারণে মাটির উর্বরতা কমতে শুরু করেছে, ফলে কৃষকদের বেশি সার ব্যবহার করতে হচ্ছে, যা ব্যয়বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

 

n জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ :

 জামালপুর জেলার মানুষের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে:

  • কৃষি উৎপাদনে অনিশ্চয়তা: ফসল চাষের সময় ধরনে পরিবর্তন এসেছে, যা কৃষকের আয়কে প্রভাবিত করছে।
  • জলবায়ুজনিত অভিবাসন: নদীভাঙন খরার কারণে মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
  • জীবিকা সংকট: কৃষি মৎস্যজীবীদের জন্য আয়ের সুযোগ কমে যাচ্ছে।
  • পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা: বনভূমির ক্ষয়, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পরিবর্তন এবং মাটি ক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

n কৃষিতে নারীর ভূমিকা

নারীরা দীর্ঘদিন ধরে কৃষি কাজে অবদান রাখছেন, তবে তাদের কাজের যথাযথ স্বীকৃতি মেলে না। জামালপুর জেলার গ্রামাঞ্চলে নারীরা কীভাবে কৃষি ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন তা উল্লেখযোগ্য:

. কৃষি উৎপাদনে সরাসরি অংশগ্রহণ

নারীরা জমিতে চাষাবাদ থেকে শুরু করে বীজ বপন, সেচ, ফসল তোলা এবং সংরক্ষণের কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

. গৃহপালিত পশু পালন

নারীরা কৃষি কাজের পাশাপাশি গবাদি পশু পালন, হাঁস-মুরগি লালন-পালন এবং দুগ্ধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা পরিবারে বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে।

. ফসল সংরক্ষণ বিপণন

অনেক নারী ঘরে উৎপাদিত শাকসবজি অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন, যা তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বাড়ায়।

. বীজ সংরক্ষণ পরিবেশবান্ধব কৃষি

গ্রামাঞ্চলের নারীরা স্থানীয়ভাবে মানসম্মত বীজ সংরক্ষণ করেন এবং জৈব পদ্ধতিতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেন।

 

n নারীর ক্ষমতায়নের প্রধান চ্যালেঞ্জ

যদিও নারীরা কৃষিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন, কিন্তু তাদের ক্ষমতায়নের পথে বেশ কয়েকটি বড় বাধা রয়েছে:

. সম্পদের মালিকানা নিয়ন্ত্রণ

নারীদের জমির মালিকানা সীমিত হওয়ায় তারা কৃষি ঋণ, সরকারি সুবিধা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।

. প্রযুক্তির সীমিত প্রবেশাধিকার

নারীরা কৃষি কাজে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ কম পান, যার ফলে তারা অন্যান্য কৃষকদের তুলনায় পিছিয়ে থাকেন।

. সামাজিক পারিবারিক বাধা

অনেক পরিবারে নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সীমিত, ফলে তারা কৃষি বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন না।

. অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

নারীরা সাধারণত কম পারিশ্রমিক পান এবং কৃষি কাজে তাদের শ্রমের মূল্যায়ন হয় না।

 

n আমাদের করণীয়: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা নারীর ক্ষমতায়ন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। জামালপুর জেলার মতো কৃষিনির্ভর অঞ্চলে বিশেষভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে কৃষক এবং নারী কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়। নিচে বিস্তারিতভাবে সম্ভাব্য করণীয় পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা হলো।

. জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রযুক্তির প্রসার

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ছে, তাই আধুনিক সহনশীল প্রযুক্তি ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি।

  • জলবায়ু সহনশীল ফসল: এমন জাতের ফসল উদ্ভাবন চাষ করতে হবে, যা খরা, অতিবৃষ্টি বা বন্যার প্রতি সহনশীল।
  • জৈব কৃষি পরিবেশবান্ধব চাষ: রাসায়নিক সার কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
  • সতর্ক পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা: ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ফসলের জন্য কার্যকর সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

 

. নারীদের কৃষিতে দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ

নারী কৃষকদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে তাদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করা এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি।

  • কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন: নারীদের জন্য বিশেষায়িত কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি শেখানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
  • নারী কৃষকের জন্য ঋণ সুবিধা: সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রদান করতে হবে, যাতে তারা স্বাধীনভাবে কৃষিকাজ করতে পারেন।
  • নারীর সম্পদের মালিকানা নিশ্চিতকরণ: নারীদের জমির মালিকানা কৃষি সিদ্ধান্তগ্রহণে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত।

 

. নদীভাঙন বন্যা মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ

জামালপুর জেলায় প্রায় প্রতিবছর বন্যা নদীভাঙনের কারণে কৃষি জমি, বাড়িঘর এবং অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য প্রয়োজন কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

  • বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা: বাঁধ নির্মাণ, নদীর তীর সংরক্ষণ এবং জলাধার পুনর্গঠন করে বন্যার ক্ষতি কমানো যেতে পারে।
  • নদীভাঙন মোকাবিলা: স্থানীয়ভাবে বৃক্ষরোপণ এবং নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
  • নিরাপদ বাসস্থান পরিকল্পনা: বন্যা নদীভাঙনের শিকার জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

. পরিবেশ সংরক্ষণ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা

জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশ সংরক্ষণ উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।

  • বনায়ন বৃদ্ধি: বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে মাটি ক্ষয় রোধ করা এবং উষ্ণতা কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
  • পরিবেশবান্ধব কৃষি: ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতির বিস্তার ঘটাতে হবে।
  • পানির সংরক্ষণ: ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে জলাশয় সংরক্ষণ বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

. জনসচেতনতা সামাজিক উদ্যোগ

জলবায়ু পরিবর্তন নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি।

  • শিক্ষা প্রচারণা: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার কৌশল নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালানো দরকার।
  • স্থানীয় নেতৃত্বের উন্নয়ন: নারীদের নেতৃত্বে আনতে উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে তারা কৃষি পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারেন।
  • সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: নারীদের কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং তাদের স্বীকৃতি দিতে হবে।

 

ইতিকথা

জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম বড় সংকট, যার প্রভাব জামালপুর জেলার মতো কৃষিনির্ভর অঞ্চলে আরও স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে। অনিয়মিত আবহাওয়া, বন্যা, নদীভাঙন, খরা এবং কৃষি উৎপাদনে অনিশ্চয়তার কারণে এখানকার কৃষকরা প্রতিনিয়ত সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন। বিশেষ করে নারী কৃষকদের ক্ষেত্রে এই সংকট আরও প্রকট, কারণ তারা কৃষিকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত বাধার কারণে পিছিয়ে রয়েছেন।

 

অঞ্চলের নারীরা ফসল উৎপাদন, গবাদি পশু পালন, শস্য সংরক্ষণ বাজারজাতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তবে সম্পদের মালিকানা, প্রশিক্ষণের অভাব, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে তারা কৃষিক্ষেত্রে তাদের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছেন না। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে এসব চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়ে নারীদের আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।

 

এই সংকট মোকাবিলা করতে হলে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রয়োজন জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রযুক্তি উন্নয়ন, নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ অর্থনৈতিক সহায়তা, বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি। বিশেষ করে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে নারীদের কৃষিতে দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

 

পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন, কৃষক পরিবেশবিদদের যৌথভাবে কাজ করা জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সচেতনতা বাড়ানো, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। নারীদের কৃষিক্ষেত্রে আরও সক্রিয় করা গেলে কৃষির স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব কমানো সম্ভব হবে।

 

অতএব, জামালপুর জেলার কৃষি নারী ক্ষমতায়নকে টেকসই উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে হলে সকল অংশীদারের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তাহলে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের কৃষি সামাজিক কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সফলভাবে মোকাবিলা করা যাবে

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1মন্তব্যসমূহ

সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন

  1. সুন্দর বিশ্লেষণ । লেখককে অভিনন্দন জানাই তথ্যবহুল লেখনীর জন্য

    উত্তরমুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন