![]() |
\ মোঃ রাশেদুর রহমান রাসেল \ |
সম্প্রতি দেশে ব্যবসায়ীদের উপর হামলা, অপহরণ এবং হত্যার ঘটনা যেভাবে বাড়ছে, তা গভীর উদ্বেগজনক ও সমাজের জন্য অশনি সংকেত। একজন ব্যবসায়ী শুধুমাত্র নিজের পরিবার নয়, বরং একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক শ্রেণী ও কর্মসংস্থানের অবলম্বন। অথচ এই শ্রেণীর মানুষ আজ চরম অনিরাপত্তার মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হুমকি, স্থানীয় দুষ্কৃতিকারীদের দৌরাত্ম্য কিংবা ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে যেভাবে নিরপরাধ ব্যবসায়ীরা প্রাণ হারাচ্ছেন, তা শুধু আইনশৃঙ্খলার চরম ব্যর্থতাই প্রকাশ করছে না; বরং এটি একটি সমাজ কাঠামোর নৈতিক পতনকেও নির্দেশ করে। ব্যবসায়ী হত্যা শুধু একজন মানুষের জীবনই কেড়ে নেয় না, বরং একটি পরিবারের ভবিষ্যৎ, একটি প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ এবং সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারীদের জীবিকা অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়। ফলে এই ঘটনাগুলোর প্রভাব ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়েও বিরূপ প্রভাব ফেলতে বাধ্য। একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য সুষ্ঠু ব্যবসা পরিবেশ অপরিহার্য। নিরাপত্তাহীনতা, বিচারহীনতা এবং প্রশাসনিক গাফিলতির কারণে যখন ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দিন কাটায়, তখন দেশের বিনিয়োগ পরিবেশও ঝুঁকির মুখে পড়ে। এছাড়াও সামাজিক অস্থিরতা ও আস্থার সংকট তৈরি হয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে:
১. দ্রুত বিচার : ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে সমাজে বার্তা দিতে হবে যে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।
২. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতা : পুলিশের দায়িত্বহীনতা বা অবহেলা থাকলে তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে হবে। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি নৈতিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের ঐক্য : ব্যবসায়ীদের নিজস্ব সংগঠনগুলোকেও আরও সক্রিয় ও সংহত হতে হবে। অপরাধের বিরুদ্ধে তাদের সচেতনতা, প্রতিবাদ ও আইনি উদ্যোগ বাড়াতে হবে।
৪. রাজনীতির প্রভাবমুক্ত প্রশাসন : স্থানীয় প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে দায়িত্ব পালনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তারা স্বাধীনভাবে অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন। আমরা যদি একজন সফল ব্যবসায়ীর সাফল্যে ঈর্ষা করি এবং ভুল পন্থায় প্রতিহিংসা নিতে চাই, তাহলে তা আমাদেরই সামাজিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা এবং সমাজে একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করাই হোক আমাদের সর্বোচ্চ অঙ্গীকার। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। জনগণের প্রাণ ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে উন্নয়নের সব গল্পই অকার্যকর। তাই ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন, জামালপুর।
সরকারি মিডিয়া (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত জামালপুরের প্রচারশীর্ষ দৈনিক-সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন । আপনার মতামত প্রকাশ করুন